তিলাওয়াতের সুন্নাত সমূহ ও নিয়মাবলী: হ্যালো বন্ধুরা আজকে আমরা এই সুন্দরতম বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো, যা আপনাদের সবার জানা দরকার। আপনি যদি এই বিষয়টি না জানেন তাহলে আপনার জীবন স্বার্থক হবে না। এই জন্য এই পোস্টটি সম্পর্ণ পড়ুন।
তিলাওয়াতের সুন্নাত সমূহ ও নিয়মাবলী
প্রথম নিয়মঃ
তিলাওয়াতের সুন্নাত সমূহ ও নিয়মাবলী
১. একটা আয়াত মুখস্থ করে নেয়া প্রত্যেক শরীয়তের বিধি পালনে আদিষ্ট মুসলমানের উপর ফরয-ই-‘আইন’ (প্রত্যক্ষভাবে পালন করা ফরয)। আর পূর্ণ কোরআন শরীফ মুখস্থ করে নেয়া ফরয-ইকিফায়া’ (কিছুলােক সে ফরযটা পালন করলে সবাই পরােক্ষভাবে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়)। সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি ছােট সূরা কিংবা তদনুরূপ, যেমন, তিনটি ছােট আয়াত ও একটি বড় আয়াত মুখস্থ করা ওয়াজিব-ই-আইন’ (প্রত্যেকের উপর প্রত্যক্ষভাবে পালন করা ওয়াজিব বা অপরিহার্য)। (দুররে মােখতার)
দ্বিতীয় নিয়মঃ
২. কোরআন মজীদ দেখে দেখে পড়া মুখস্থ পড়ার চেয়ে বেশী উত্তম। কারণ, এতে পড়াও হয়, দেখাও হয় এবং হাতে স্পর্শও করা হয়। এ সবক’টি কাজই ইবাদত। (বাহারে শরীয়ত ) ৩ মুস্তাহাব হচ্ছে-ওযূ সহকারে কিবলামুখী হয়ে এবং উত্তম পােশাক পরিধান করে তিলাওয়াত করা। তিলাওয়াত শুরু করার সময় ‘আউযু বিল্লাহ’ পড়া সুন্নাত।
সূরাগুলাের শুরুতে “বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নাত, অন্যথায় মুস্তাহাব। আর যদি যে আয়াত পড়তে চায় সেটার শুরুতে মহান মুনিব (আল্লাহ্ তা’আলা)-এর দিকে মন নিবদ্ধ হয়, তবে এমতাবস্থায় ‘আউযু বিল্লাহ -এর সাথে ‘বিসমিল্লাহ পড়া মুস্ত হাব হওয়া নিশ্চিত।
তৃতীয় নিয়মঃ
৩. মাঝখানে কোন দুনিয়াবী কথাবার্তা বললে ‘আ’উযু বিল্লাহ্’ ও ‘ বিসমিল্লাহ’ পুনরায় পড়বে। আর যদি দ্বীনী কথাবার্তা বলে, যেমন, সালাম কিংবা আযানের জবাব দেয়, সুবহানাল্লাহ্’, ‘কলেমা তৈয়্যবাহ্’ ইত্যাদি যিকরসূচক কলেমা উচ্চারণ করে, তবে ‘আ’উযু বিল্লাহ’ পুনরায় পড়া তার জন্য কর্তব্য নয়। (গুনিয়াহ্ ইত্যাদি)
চতুর্থ নিয়মঃ
৪. শুয়ে শুয়ে কোরআন পড়ার মধ্যে কোন অসুবিধা নেই, যদি পা গুটানাে ও মুখ খােলা থাকে। অনুরূপভাবে, চলার সময় ও কাজ করার অবস্থায়ও তিলাওয়াত করা জায়েয, যদি অন্তর সঙ্কুচিত না হয়, অন্যথায় মাকরূহ। (গুনিয়াহ্)
পঞ্চম নিয়ম
৫. গােসলখানা ও আবর্জনার স্থানে (অর্থাৎ পায়খানা ) কোরআন মজীদ পাঠ করা বৈধ নয়।
৬. যখন উচ্চ রবে কোরআন মজীদ পাঠ করা হয়, তখন উপস্থিত সবার জন্য তা শােনা ফরয- যদি ওই জমায়েত কোরআন তেলাওয়াত শােনার উদ্দেশ্যে হাযির হয়; নতুবা যে কোন একজন শুনলে যথেষ্ঠ, যদিও অন্য লােকেরা কাজে মশগুল থাকে। (গুনিয়াহ্, ফাতাওয়া-ই-রেভিয়া)
৭. জমায়েতে সবাই উচ্চ স্বরে পড়া হারাম। বেশীরভাগ সময় মৃতব্যক্তির তৃতীয়/চতুর্থ দিবসের ফাতিহা-খানিতে সবাই উচ্চরবে পড়ে থাকে। এটা হারাম। যদি কয়েকজন পাঠক একত্রিত হয় তবে বিধান হচ্ছে সবাই নীরবে পড়বে। (‘বাহারে শরীয়ত’, ‘দুররে মুখতার’ ইত্যাদির বরাতে) অবশ্য, প্রত্যেক পড়ার মধ্যে এতােটুকু আওয়াজ করা জরুরী যেন নিজে শুনে; যদি কোন কারণে (শােরগােল ও বধিরতা) শুনতে অসুবিধা না হয়। (বাহারে শরীয়ত)
৮. বাজারগুলােতে এবং যেখানে লােকেরা কাজে মশগুল থাকে, উচ্চরবে পড়া না-জায়েয। যদি সবলােক না শুনে তবে গুনাহ পাঠকের উপর বর্তাবে। যদি কাজে মশগুল হবার পূর্বে সে পড়া
৯. শুরু করে দিয়ে থাকে, আর ওই স্থানটাও কাজের জন্য নির্ধারিত হয়, তবে যদি পড়া সে পূর্বেই শুরু করেছে, কিন্তু লােকেরা না শুনে তবে ওই সব লােকেরাই গুনাহগার হবে। আর যদি কাজ শুরু করার পর সে পড়া শুরু করে থাকে, তবে গুনাহ তার উপর বর্তাবে। (গুনিয়াহ)
দশম নিয়ম
১০. মাদ্রাসায় সবক মুখস্থ করার জন্য একই সময়ে একাধিক ছাত্র উচ্চ রবে কোরআন শরীফ পাঠ করে থাকে। এটা জায়েয। ১০. তিলাওয়াতরত অবস্থায় ধর্মীয় কোন সম্মানিত ব্যক্তি, ইসলামী বাদশাহ্, আলিমে দ্বীন, ওস্তাদ কিংবা পিতা সেখানে এসে যান তবে তিলাওয়াতকারী তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়াতে পারবে। (গুনিয়াহ)
১১, কোরআন মজীদ উচ্চ স্বরে পাঠ করা উত্তম, যখন কোন নামাযী, রশ্নব্যক্তি কিংবা ঘুমন্ত ব্যক্তির কষ্ট না হয়। (গুনিয়াহ)
১২. কেউ ভুল পড়ছে। তখন শ্রোতার উপর তাকে সংশােধন করে দেয়া ওয়াজিব, এ শর্তে যে, যদি সংশােধন করে দেয়া হয়, তবে হিংসা-বিদ্বেষ পয়দা না হয়। (গুনিয়াহ্) অনুরূপভাবে, যদি কারাে পবিত্র কোরআনের কপি নিজের জন্য ধার চেয়েছে, যদি তাতে লিখনে কোন ভুল দেখা যায় তবে তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করা ওয়াজিব। (বাহারে শরীয়ত)
১৩. কোরআন মজীদ মুখস্থ করে ভুলে যাওয়া গুনাহ। সরকারে মদীনা (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) এরশাদ ফরমাচ্ছেন,“আমার উম্মতের সাওয়াব আমার সামনে পেশ করা হয়েছে, এমনকি একটা খড়কুটা, যা মানুষ মসজিদ থেকে বাইরে ফেলে দেয়, আর আমার উম্মতের গুনাহও আমার সামনে পেশ করা হয়েছে। তখন আমি এ থেকে বৃহত্তর গুনাহ দেখিনি যে, মানুষকে সূরা কিংবা আয়াত (মুখস্থ করার শক্তি) দেয়া হয়েছে, কিন্তু সে ভুলে গেছে। এ হাদীস শরীফ আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।
বিশতম নিয়ম
২০, কোরআন শরীফ যদি (আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লার পানাহ্) হাত থেকে ছুটে নীচে পড়ে যায়, তবে সেটার কোন কাফফারা নেই।
২১. যদি (আল্লাহর পানাহ) কেউ কোরআন পাকের অবমাননা করে বসলাে, কিংবা অবমাননার উদ্দেশ্যে সেটার উপর পা রেখে দিলাে, তবে সে কাফির হয়ে গেলাে।
২২. খুবই আগ্রহ ও মনযােগ সহকারে কোরআন মজীদ তেলাওয়াত করবেন।
২৩. একাগ্রচিত্তে কোরআন মজীদ তিলাওয়াত করবেন। আর তাতে কখনাে অবহেলা ও অমনযােগীতা প্রদর্শন করবেন না।
২৪. তিলাওয়াতের পূর্বে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি পুরােপুরিভাবে গুরুত্ব দেবেন।
২৫. তিলাওয়াতের সময় বাহ্যিক পবিত্রতার সাথে সাথে অন্তরকেও নাপাক ধ্যান-ধারণাদি, মন্দ আবেগ ও কু-উদ্দেশ্যাবলী থেকে পবিত্র রাখবেন।
২৬. সর্বদা পাক-সাফ স্থানে বসে কালামে পাকের তিলাওয়াত করবেন।
২৭.কোরআন মজীদের মহত্বের সাথে সাথে আল্লাহ্ তা’আলার মহত্বও অন্তরে বদ্ধমূল করুন! আর এ নিশ্চিত বিশ্বাস রাখুন যে, যা আপনি পাঠ করছেন তা কোন মানুষের বাণী
নয়। (মহান আল্লাহরই বাণী।)
২৮.যদি কারাে জন্য কষ্টকর না হয়, তবে উচ্চ রবে কালামে পাক তিলাওয়াত করবেন।
২৯. মানুষকে নিজের ভক্ত ও আসক্ত বানানাে, নিজের সুললিত কণ্ঠের প্রতি আস্থা জমানাে এবং নিজের ধার্মিকতার প্রতি বিশ্বাস যােগানাের উদ্দেশ্যে তিলাওয়াত করা থেকে বিরত থাকুন!
৩০. সাহরী ও তাহাজ্জুদের সময় কোরআন মজীদ তিলাওয়াত করার জন্য খুব বেশী চেষ্টা করবেন। বিশেষ গুরুত্ব সহকারে এ সময়গুলােতে তিলাওয়াত করবেন।
আশা করি আপনাদের এই “তিলাওয়াতের সুন্নাত সমূহ ও নিয়মাবলী” বিষয়টি বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি। যদি কোনো বিষয় না বোঝেন তাহলে আমাদের ফেসবুক পেইজ এ নক দিতে পারেন।