কারক কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | কারক কয় প্রকার ও কি কি? | কারক চেনার সহজ উপায় | কারক নির্ণয়ের সূত্র

কারক হলো বাক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আমাদের বাক্যের বিভিন্ন পদে থাকা সম্পর্কগুলোকে বুঝতে সাহায্য করে। এটি ছয় প্রকারের হয়, যেমন কর্তৃ, কর্ম, করণ, নিমিত্ত, অপাদান, এবং অধিকরণ কারক। এই ব্লগে, আমরা সহজ ভাষায় প্রতিটি কারক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, যাতে আপনার জন্য বিষয়টি আরও সহজ ও পরিষ্কার হয়।

কারক কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | কারক কয় প্রকার ও কি কি? | কারক চেনার সহজ উপায় | কারক নির্ণয়ের সূত্র

কারক কাকে বলে কয় প্রকার ও কি কি?

বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াপদের সাথে বিশেষ্য বা সর্বনাম জাতীয় পদের যে সম্পর্ক আছে, সেটিকে কারক বলা হয়। এই সম্পর্কটি ছয় ধরনের। তাই কারক ছয় প্রকার। এই প্রকারগুলো হলো:

  • 1. কর্তৃ কারক
  • 2. কর্ম কারক
  • 3. করণ কারক
  • 4. নিমিত্ত কারক
  • 5. অপাদান কারক
  • 6. অধিকরণ কারক

কারক চেনার সহজ উপায়

বাক্যের মূল ক্রিয়াকে প্রশ্ন করে এই ছয় ধরনের সম্পর্ক চিহ্নিত করা হয়। যেমন- 'বিদ্যালয়ে শিক্ষক মহাশয় স্বহস্তে আলমারি হতে ছাত্রকে বই দিচ্ছেন।'

এই বাক্যের মূল ক্রিয়া হচ্ছে ‘দিচ্ছেন'। মূল ক্রিয়াকে নিয়ে প্রশ্ন করলে কারক চিহ্নিত হয়। যেমন:

  • কে দিচ্ছেন – শিক্ষক মহাশয় [কর্তৃ কারক]
  • কী দিচ্ছেন - বই (কর্ম কারক)
  • কীসের দ্বারা দিচ্ছেন - স্বহস্তে (করণ কারক)
  • কাদেরকে দিচ্ছেন - ছাত্রকে (নিমিত্ত কারক)
  • কোথা হতে দিচ্ছেন – আলমারি হতে (অপাদান কারক)
  • কোথায় দিচ্ছেন – বিদ্যালয়ে (অধিকরণ কারক)

উপরের বাক্যে শিক্ষক মহাশয়, বই, স্বহস্তে, ছাত্রকে, আলমারি হতে, বিদ্যালয়ে সবগুলি নামপদ (বিশেষ্য) ক্রিয়া 'দিচ্ছেন’ এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এই নামপদগুলোর সঙ্গে ক্রিয়ার সম্পর্কই কারক।

কারক নির্ণয়ের সূত্র

কারক নির্ণয়ের পদ্ধতি
কর্তৃকারক মূল ক্রিয়াপদকে 'কে' বা 'কাকে' বা 'কারা' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটি কর্তৃকারক।
কর্মকারক ক্রিয়াপদকে 'কী' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটি কর্ম কারক।
করণকারক ক্রিয়াপদকে 'দ্বারা', 'দিয়ে', 'দিয়া' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটি করণ কারক।
নিমিত্ত কারক ক্রিয়াপদকে 'জন্য', 'তরে' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটি নিমিত্ত কারক।
অধিকরণ কারক স্থান, সময়, পাত্র ইত্যাদিতে আছে বোঝালে সেটি অধিকরণ কারক হবে।
অপাদান কারক হতে, থেকে, চেয়ে বোঝালে সেটি অপাদান কারক হবে।

ছন্দে ছন্দে কারক মনে রাখার কৌশল

“কে যায় কর্তা রূপে
কি কর্ম কাকে
দ্বারা দিয়ে করণ হবে
অপাদান হইতে থেকে
নিঃস্বার্থে যাকে দান
সেই সম্প্রদান।”
স্থান কালে হয় অধিকরণ।

কর্তৃ কারক

কর্তৃ কারক কাকে বলে?

বাক্যে যে পদ ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্তৃপদ বলা হয় এবং ক্রিয়ার সাথে তার যে সম্পর্ক থাকে সেটিকে কর্তৃকারক বলা হয়।

কর্তৃ কারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে 'কে' বা 'কাকে' বা 'কারা' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেই কর্তা। যেমন—রামন বাজারে গেল। এই বাক্যের ক্রিয়া হচ্ছে ‘গেল’। এখন ‘কে বাজারে গেল?' এই প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় 'রামন’। তাই রামন এই বাক্যের কর্তা।

কর্তৃকারকে এক বচনে কে, এ, তে, এতে, অ (শূন্য বিভক্তি), র এবং বহুবচনে রা এবং এরা বিভক্তি যুক্ত হয়। কর্তৃকারকে 'অ’ বিভক্তি যুক্ত হলে মূল কর্তৃপদের কোন পরিবর্তন হয় না। তাই এই বিভক্তিকে 'শূন্যবিভক্তি' বলা হয়।

কর্তৃকারকে বিভক্তির উদাহরণ

  • ক) শূন্য বিভক্তি বা অ বিভক্তিঃ অ-বিভক্তির সব সময় লোপ হয়। যেমন-
    • 1. ‘পাখি সব করে রব। - এখানে ক্রিয়া হচ্ছে 'করে' ক্রিয়াকে প্রশ্ন করলে কে করে? উত্তর- পাখি কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
    • 2. ‘গোপাল গরুর পাল নিয়ে যায় মাঠে। উঃ গোপাল কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
    • 3. তাঁতি বসে তাঁত বোনে; জেলে ফেলে জাল। উঃ তাঁতি কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।

  • খ) কে, বিভক্তিঃ
    • 1. আমাকে খেতে হবে। উঃ আমাকে কর্তৃকারকে 'কে' বিভক্তি
    • 2. মেয়েটিকে উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। উঃ মেয়েটিকে কর্তৃকারকে 'কে' বিভক্তি।

  • গ) তে, এ এবং য় বিভক্তিঃ
    • 1. বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দেব কিসে? উঃ বুলবুলিতে কর্তৃকারকে 'তে' বিভক্তি।
    • 2. দশে মিলি করি কাজ। উঃ দশে কর্তৃকারকে 'এ' বিভক্তি
    • 3. ধোপায় কাপড় কাচে। উঃ ধোপায় কর্তৃকারকে 'য়' বিভক্তি

  • ঘ) র বিভক্তিঃ
    • 1. সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা আরম্ভ হল। উঃ অতিথির কর্তৃকারকে 'র' বিভক্তি
    • 2. তোমার বই পড়া হল না। উঃ তোমার কর্তৃকারকে 'র' বিভক্তি।

কর্ম কারক

কর্ম কারক কাকে বলে?

যাকে কর্তৃ আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কর্মকারক বলা হয়।

কর্ম কারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে ‘কি’ বা 'কাকে' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই কর্ম।

কর্মকারকে এ, য়, য়ে, কে, রে এবং বহুবচনে দিগকে, দেরকে, এদের, এদেরকে প্রভৃতি বিভক্তি যুক্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই সব বিভক্তির চিহ্ন অনুক্ত থাকে। যেমন- সে বই পড়ে। এখানে ক্রিয়া পড়ে, এই ক্রিয়া কে কি দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় বই। তাই বই হচ্ছে কর্মকারক।

কর্মকারকে বিভক্তির উদাহরণ:

  • ক) শূন্য বিভক্তি:
    • 1. গরু গাড়ি টানে। উঃ গাড়ি কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।
    • 2. দশে মিলি করি কাজ। উঃ কাজ কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

  • খ) য় বিভক্তিঃ
    • 1. কুকুর ডাকছে। উঃ ডাকছে কর্মকারকে 'য়' বিভক্তি।
    • 2. শিক্ষক শব্দ করে। উঃ শব্দ কর্মকারকে 'য়' বিভক্তি।

  • গ) কে, এ, তে, এবং র বিভক্তিঃ

    • 1. মেয়েটি বই পড়ছে। উঃ বই কর্মকারকে 'কে' বিভক্তি।
    • 2. খোকা খেলার মাঠে গেল। উঃ মাঠে কর্মকারকে 'এ' বিভক্তি।
    • 3. ছেলে বালতি ধরে। উঃ বালতি কর্মকারকে 'তে' বিভক্তি।
    • 4. মার পেটে পা দিল। উঃ পেটে কর্মকারকে 'র' বিভক্তি।

করণ কারক

করণ কারক কাকে বলে?

ক্রিয়া সম্পাদনের উপায়, মাধ্যম, উপকরণ ইত্যাদির সাথে যে সম্পর্ক থাকে তাকে করণ কারক বলা হয়।

করণ কারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে 'দিয়ে', 'দ্বারা', 'কে', 'কী' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই করণ।

করণ কারক বিভক্তির উদাহরণ:

  • ক) শূন্য বিভক্তিঃ
    • 1. জেলে জাল ফেলেছে। উঃ জাল করণ কারক।
    • 2. লেখক লেখে কলম দিয়ে। উঃ কলম করণ কারক।

  • খ) দ্বারা, দিয়ে, তে, এবং র বিভক্তিঃ
    • 1. শিক্ষক পাঠ দেন লেখার মাধ্যমে। উঃ লেখার দ্বারা করণ কারক।
    • 2. ছাত্ররা খেলা করে বলের দ্বারা। উঃ বলের দ্বারা করণ কারক।
    • 3. ছাত্র মঞ্চে নাচছে। উঃ নাচছে করণ কারক।

নিমিত্ত কারক

নিমিত্ত কারক কাকে বলে?

যার জন্য, যা দ্বারা বা যে কারণে কিছু হয় তাকে নিমিত্ত কারক বলা হয়।

নিমিত্ত কারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে ‘জন্য’ বা ‘তরে’ বা ‘জন্যে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই নিমিত্ত।

নিমিত্ত কারক বিভক্তির উদাহরণ:

  • ক) শূন্য বিভক্তিঃ
    • 1. তাতে মাথা নষ্ট হয়েছে। উঃ মাথা নষ্ট নিমিত্ত কারক।
    • 2. বই পড়ে ছাত্রটি পরীক্ষায় পাশ করল। উঃ পরীক্ষায় পাশ করল নিমিত্ত কারক।

  • খ) জন্য, তরে, দ্বারা, এবং র বিভক্তিঃ
    • 1. শিক্ষকের জন্য পাঠকে এক্ষণে শ্রদ্ধা জানাই। উঃ শিক্ষকের জন্য নিমিত্ত কারক।
    • 2. বন্ধুর জন্য গান গাই। উঃ বন্ধুর জন্য নিমিত্ত কারক।

অপাদান কারক

অপাদান কারক কাকে বলে?

যার মধ্যে থেকে, যাকে, যিনি এবং যেটি দ্বারা কিছু হয় তাকে অপাদান কারক বলা হয়।

অপাদান কারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে 'হতে', 'থেকে', 'কাছ থেকে' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তা অপাদান।

অপাদান কারক বিভক্তির উদাহরণ:

  • ক) শূন্য বিভক্তিঃ
    • 1. কুকুরটি বাগান হতে বের হয়। উঃ বাগান হতে অপাদান কারক।
    • 2. সে বাড়িতে থাকে। উঃ বাড়িতে অপাদান কারক।

  • খ) হতে এবং থেকে বিভক্তিঃ
    • 1. আমি তোমার কাছে আসব। উঃ তোমার কাছে অপাদান কারক।
    • 2. গাছ থেকে ফল পড়ে। উঃ ফল পড়ে অপাদান কারক।

অধিকরণ কারক

অধিকরণ কারক কাকে বলে?

স্থান, সময়, পাত্র, বিষয় ইত্যাদির সাথে যে সম্পর্ক থাকে তাকে অধিকরণ কারক বলা হয়।

অধিকরণ কারক চেনার উপায়

ক্রিয়াকে 'কোথায়', 'কোথা', 'কোথায়', 'কবে', 'কবে' দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই অধিকরণ।

অধিকরণ কারক বিভক্তির উদাহরণ:

  • ক) শূন্য বিভক্তিঃ
    • 1. বাড়িতে পড়ে। উঃ বাড়িতে অধিকরণ কারক।
    • 2. মাঠে গেছে। উঃ মাঠে অধিকরণ কারক।

  • খ) তে, এ, এবং র বিভক্তিঃ
    • 1. রাস্তায় পড়ে। উঃ রাস্তায় অধিকরণ কারক।
    • 2. আকাশে পাখি উড়ে। উঃ আকাশে অধিকরণ কারক।

কারক সংক্ষেপণ:

ক্রিয়াপদকে প্রশ্ন করে আমরা কারক নির্ণয় করতে পারি:

কর্তৃ কারক: 'কে'
কর্ম কারক: 'কি'
করণ কারক: 'দিয়ে'
নিমিত্ত কারক: 'জন্য'
অপাদান কারক: 'থেকে'
অধিকরণ কারক: 'কোথায়'

বাক্য বিশ্লেষণের সময় কারকের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই কারক চিনতে পারলে বাক্য বোঝা সহজ হবে।

এই ব্লগে কারকের বিভিন্ন প্রকার ও চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আরও এমন শিক্ষামূলক পোস্ট পড়তে, অনুগ্রহ করে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য ব্লগগুলো পড়ুন।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.