কলার উপকারিতা ও অপকারিতা | কলার পুষ্টি উপাদান | কলার ব্যবহার

কলা, যা আমরা সবাই খুব সহজে পাই এবং খেতে পছন্দ করি, তা শুধু মজাদারই নয়, বরং আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এই ফলটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে সহায়ক হতে পারে। আজকের পোস্টে আমরা জানবো কলার অসংখ্য উপকারিতা। চলুন, পুরো পোস্টটি পড়ে নেয়া যাক এবং কলা সম্পর্কে আরও জানুন।

কলার উপকারিতা ও অপকারিতা | কলার পুষ্টি উপাদান | কলার ব্যবহার

কলার উপকারিতা

কলা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন উপকারে আসে। এটি সহজলভ্য এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খাওয়ার মাধ্যমে আমরা সহজে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারি।

তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান

কলায় তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায় এবং দুর্বলতা দূর করে। যারা শরীরচর্চা বা শারীরিক পরিশ্রম করে থাকেন, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার স্ন্যাক্স হিসেবে কাজ করে।

কিডনি সুরক্ষায় সহায়ক

নিয়মিত কলা খেলে কিডনি সুরক্ষিত থাকে, কারণ এতে প্রচুর পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং কিডনি পাথর প্রতিরোধ করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

কলা ওজন কমাতে এবং বাড়াতে উভয়ভাবেই সহায়ক। যাদের ওজন বাড়াতে হবে তারা কলা খেলে পর্যাপ্ত ক্যালোরি পায়, আর যারা ওজন কমাতে চান, তারা সহজেই কলা থেকে পুষ্টি পেতে পারেন কম ক্যালোরির মাধ্যমে।

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ

কাঁচা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর। এটি অন্ত্রের গতি বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

কাঁচা কলা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন ও মিনারেলসমূহ অন্ত্রকে স্বাস্থ্যকর রাখে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।

ত্বক ও চুলের যত্নে

কলায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকে, চুলও শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর হয়।

রক্ত স্বল্পতা প্রতিরোধ

রক্ত স্বল্পতা দূর করতেও কলা উপকারী, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

কলার নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা

কলা:

কলা বা Banana হলো বেরি জাতীয় একটি সুমিষ্ট ফল। এটি দেখতে হলুদ, লাল, সবুজ বিভিন্ন রঙয়ের হয়। তবে, কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকা অবস্থায় হলুদ এমন কলাই বেশি পরিচিত। কলা মূলত মিউজেসি (Musaceae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত মিউজা (Musa) গণের একটি একবীজপত্রী উদ্ভিদের ফল। কলার সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনটি প্রজাতি হলো:

  1. Musa sapientum: বাজারে বীজবিহীন যেসব কলা পাকা অবস্থায় খাওয়া যায় তা মূলত এই প্রজাতির কলা। এই প্রজাতির কলার গাছ তুলনামূলক দীর্ঘকার হয়।
  2. Musa cavendishi: পাকা অবস্থায় খাওয়ার উপযোগী যেসব কলার গাছ বামন আকৃতির, সেসব কলা এই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।
  3. Musa paradisiaca: যেসব কলা রান্না করে খাওয়া হয় তা এই প্রজাতির। এই প্রজাতির কলাগুলো হাইব্রিড বা সংকর হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৯ টি কলার জাত রয়েছে। সারা বিশ্বে কলার প্রায় একশো প্রজাতির কলা রয়েছে। কলা সাধারণত উষ্ণ জলবায়ুতে ভালো জন্মায়। তবে এটি এখন সারা বছরই যেকোনো মাটিতে চাষ করা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, কলার আদি বাসস্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে চীন ও ভারতবর্ষে। তবে অনেকের মতে পাক-ভারত ও মালয়ই কলার আদি উৎপত্তিস্থল। বর্তমানে সারা বিশ্বেই কলা ব্যাপক হারে চাষ করা হয়। বাংলাদেশও এর বিপরীত নয়।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় কলাগুলোর মধ্যে বীজহীন ও বীজময় জাতের নাম উল্লেখযোগ্য:

  • বীজহীন কলা – সবরি, সাগর, দুধসর, দুধ সাগর, কগ্নিশ্বর, ইত্যাদি।
  • সল্প বীজের কলা – চম্পা, চিনি, জাবকাঁঠালি, কবরি, চিনি চম্পা, ইত্যাদি।
  • বীজময় কলা – এঁটে কলা, বতুর, আইটা, গোমা, ইত্যাদি।
  • কাঁচাকলা বা রান্নার কলা – আনাজি কলা, ভেড়ার ভোগ, চোয়াল পউশ, বর ভাগনে, বেহুলা, মন্দিরা, বিয়ের বাতি, ইত্যাদি।

কলার পুষ্টি উপাদান

কলাকে এর সুমিষ্ট স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য ফলের রানি বলা হয়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই কলা প্রধান ফল। কলায় রয়েছে আমিষ, জল, খনিজ পদার্থ (পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন), বিভিন্ন ভিটামিন (ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স), আঁশ, ফ্যাট বা চর্বি, শর্করা ইত্যাদি। ১০০ গ্রামের একটি কলায় উপস্থিত থাকে ১১৬ ক্যালরি, যা শক্তির অন্যতম উৎস।

কলার ব্যবহার

পাকা কলা ফল হিসেবে খাওয়া হয় এবং কাঁচা কলা রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁচা কলা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি হয়। কাঁচা কলার খোসাও খাওয়া হয়। পাকা কলা ফল হিসেবে তো খাওয়াই যায়, সেই সাথে এটি দিয়ে কেক, পিঠা, ডেজার্ট, আইসক্রিমও তৈরি করা হয়।

কলার অপকারিতা

  1. মাইগ্রেনের রোগীদের জন্য কলা ক্ষতিকর হতে পারে।
  2. কিডনি রোগীদের কলা খাওয়া অনুচিত।
  3. অতিরিক্ত কলা খেলে হাইপারক্যালেমিয়া হতে পারে।
  4. অতিরিক্ত কলা খেলে দাঁতে ক্ষয় হয়।
  5. নার্ভ সিস্টেমের ক্ষতি হতে পারে।

অতিরিক্ত কলা খেলে বদহজম, ক্লান্তি, গ্যাস সৃষ্টি, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকতে পারে।

প্রিয় পাঠক, এই ছিল কলার উপকারিতা ও অপকারিতা। পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং ডেইলি লাইভ সাইটে আরও পড়ুন।

প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনি কলার উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। আপনার যদি এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আমার সাইটে আরও পোস্ট পড়ুন। এখানে আপনি অনেক মজার এবং শিক্ষামূলক বিষয় পাবেন, যা আপনার জীবনে কাজে লাগবে!

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.