শ্বসন কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | শ্বসন প্রক্রিয়া | শ্বসন কোথায় এবং কখন হয় | শ্বসনের গুরুত্ব

শ্বসন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা জীবের শক্তির উৎস। তবে শ্বসন আসলে কী, এবং এটি কীভাবে কাজ করে? এই প্রক্রিয়াটি জীবদেহের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়? এই প্রশ্নগুলির উত্তর জানতে পড়তে থাকুন, কারণ শ্বসনের জটিল প্রক্রিয়া খুব সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। শ্বসনের প্রকারভেদ ও প্রভাব থেকে শুরু করে এর গুরুত্ব—সবকিছু এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে।

শ্বসন কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | শ্বসন প্রক্রিয়া | শ্বসন কোথায় এবং কখন হয় | শ্বসনের গুরুত্ব

শ্বসন কাকে বলে?

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবদেহের কোষে অবস্থিত জটিল যৌগিক খাদ্যদ্রব্য জারিত হয়ে সরল দ্রব্যে পরিণত হয় এবং শক্তি উৎপন্ন করে তাকে শ্বসন বলে।

শ্বসন হলো সেই প্রক্রিয়া যেখানে জটিল খাদ্যদ্রব্য সহজে পরিণত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে।

শ্বসনের সময় খাদ্যদ্রব্য জারিত হয় এবং এটি একটি তাপমোচী প্রক্রিয়া। অক্সিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে শ্বসন হতে পারে। উদ্ভিদে সাধারণত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে শ্বসন হয়।

শ্বসন প্রক্রিয়া: সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা

শ্বসন হলো এক ধরনের প্রক্রিয়া যা জীবের কোষে ঘটে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য জারিত হয় এবং শক্তি উৎপন্ন হয়। এ শক্তি জীবের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজন হয়।

প্রত্যেক জীবিত কোষে বিভিন্ন ধরনের জীবনক্রিয়া চলে। এই সব ক্রিয়ার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। শক্তির উৎস হলো কোষের মধ্যে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, যেমন কার্বোহাইড্রেট (শর্করা), প্রোটিন (আমিষ) এবং লিপিড। এই খাদ্যদ্রব্যগুলো বিশেষ ধরনের প্রক্রিয়ায় শক্তিতে পরিণত হয়।

এই শক্তি (kinetic energy) দিয়ে জীবের সকল প্রকার ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কার্বোহাইড্রেট সাধারণত শক্তির প্রধান উৎস, তবে তৈল উৎপাদনকারী ও আমিষ উৎপাদনকারী উদ্ভিদের বীজেও লিপিড ও প্রোটিন শক্তির উৎস।

শ্বসনের প্রকারভেদ

শ্বসন প্রক্রিয়া দুই ধরনের:

  • সবাত শ্বসন বা বায়বীয় শ্বসন (aerobic respiration)
  • অবাত শ্বসন বা অবায়বীয় শ্বসন (anaerobic respiration)

সবাত শ্বসন

সবাত শ্বসন সেই প্রক্রিয়া যেখানে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় এবং খাদ্য সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি পাওয়া যায়।

এতে অক্সিজেন বায়ু থেকে আসে এবং কোষে প্রবেশ করে। দ্রবীভূত অক্সিজেন খাদ্যকে সম্পূর্ণ জারিত করে এবং প্রচুর শক্তি উৎপন্ন করে।

অবাত শ্বসন

অবাত শ্বসন হলো সেই প্রক্রিয়া যেখানে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না। এই প্রক্রিয়ায় খাদ্য সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যায় না, বরং আংশিকভাবে ভাঙে। এর ফলে কিছু মধ্যবর্তী যৌগ যেমন ইথাইল এবং অ্যালকোহল উৎপন্ন হয়।

অবাত শ্বসনে কম শক্তি উৎপন্ন হয় এবং এটি সাধারণত নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে ঘটে। তবে কিছু উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের মূল বন্যায় প্লাবিত হলে এটি ঘটতে পারে।

শ্বসন কোথায় এবং কখন হয়

শ্বসন প্রতিটি জীবিত কোষে ঘটে, দিন-রাত সর্বদা। কোষের সাইটোপ্লাজম এবং মাইটোকনড্রিয়াতে সবাত শ্বসন হয়, আর অবাত শ্বসন হয় সাইটোপ্লাজমে।

শ্বসনে উৎপন্ন শক্তি কোষের বিভিন্ন কার্য সম্পাদনের জন্য ATP নামে পরিচিত। ATP কে জীবনের মুদ্রা বলা হয়।

শ্বসন প্রক্রিয়ায় শক্তির উৎপাদন

সবাত শ্বসনের এক অণু গ্লুকোজ কোষের মাইটোকনড্রিয়াতে জারিত হয় এবং ATP-তে রূপান্তরিত হয়। মাইটোকনড্রিয়া কোষের শক্তির উৎস।

শ্বসনের প্রভাবক

শ্বসন প্রক্রিয়া কিছু প্রভাবক দ্বারা প্রভাবিত হয়। বাহ্যিক প্রভাবকগুলোর মধ্যে রয়েছে আলো, কার্বন ডাইঅক্সাইড, পানি, তাপমাত্রা ও অক্সিজেন।

অভ্যন্তরীণ প্রভাবকগুলোর মধ্যে রয়েছে এনজাইম, খাদ্যদ্রব্য, কোষের বয়স এবং অন্যান্য।

শ্বসনের গুরুত্ব

শ্বসন প্রক্রিয়া জীবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রতিটি কোষে প্রতিটি মুহূর্তে শ্বসন ঘটে। এটি বন্ধ হলে জীবিত কোষ মারা যায়।

শ্বসনের মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন হয় যা উদ্ভিদের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়। সালোকসংশ্লেষণের সময় সঞ্চিত শক্তি শ্বসনের সময় ব্যবহৃত হয়।

শ্বসন থেকে উৎপন্ন CO2 সালোকসংশ্লেষণে ব্যবহার হয় এবং খাদ্য উৎপন্ন হয়। উদ্ভিদের কোষ বিভাজনের জন্য শক্তির প্রয়োজন।

শ্বসনে উৎপন্ন জৈব অ্যাসিড পরবর্তী কাজে ব্যবহৃত হয় এবং শক্তি উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে।

শ্বসন জীবনের মূল চালিকা শক্তি। এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে আরও জানার মাধ্যমে আপনি জীবের কাজকর্ম সম্পর্কে গভীর ধারণা পাবেন। আমাদের ওয়েবসাইটে আরও এমন শিক্ষামূলক পোস্ট আছে। সেগুলোও পড়তে ভুলবেন না!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.