ভূমিকম্পের দোয়া জেনে নিন (সঠিক দোয়া) | ভূমিকম্প হলে যে দোয়া পড়তে বলেছেন প্রিয় বিশ্বনবী

ভূমিকম্পের সময় পড়ার দোয়া - এই বিষয়টি আমাদের জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যখন ভূমিকম্প হয়, তখন আমরা কীভাবে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইব? কেমন দোয়া পড়া উচিত? এই পোস্টে আমি আপনাদের জানাবো ভূমিকম্পের সময় পড়ার বিশেষ দোয়া ও ইসলামে এর সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো। আপনাদের জন্য থাকবে আল্লাহর রহমত পাওয়ার উপায় এবং বিপদ থেকে মুক্তি পেতে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে।

ভূমিকম্পের দোয়া জেনে নিন (সঠিক দোয়া) | ভূমিকম্প হলে যে দোয়া পড়তে বলেছেন প্রিয় বিশ্বনবী

ভূমিকম্পের সময় পড়ার দোয়া

ভূমিকম্পের সময় মাটির দিকে তাকিয়ে "আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা শারিকালাহু, ফাবি আইয়্যে আ’লাঈ রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান" বলুন যতক্ষণ না ভূমিকম্প শেষ হয়।

আরেকটি দোয়া যা আপনি পড়তে পারেন:

আরবি: أَنْتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ

উচ্চারণ: আন্তা ওয়ালিয়্যুনা ফাগফিরলানা ওয়ার হাম্না, ওয়া আন্তা খইরুল গফিরিন।

অর্থ: "হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রক্ষক, সুতরাং আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি-ই তো সর্বাধিক ক্ষমাকারী।" (সূরা আরাফ আয়াত ১৫৫)

আল্লাহতায়ালা মাঝে মধ্যে তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন বিপদ-আপদ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন করেন। এসব বিপদ ও দুর্যোগ পৃথিবীতে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। ভূমিকম্প এর মধ্যে অন্যতম।

ইউনুস আলাইহিস সালামের দোয়া

মুসলিমদের জন্য যেকোনো বিপদে দোয়া ইউনুস আলাইহিস সালামের দোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দোয়া সংকটকালে পড়া সুন্নত। আল্লাহর নবী ইউনুস (আ.) এই দোয়া পড়েছিলেন, এবং আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

আরবি: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ-লিমিন।

অর্থ: তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র, আমি নিশ্চয়ই জালিমদের দলের অন্তর্ভুক্ত।

ইসলামে সমাধান

ইসলামে আল্লাহ তাআলা সব কিছুর সমাধান রেখেছেন এবং এই সমাধানগুলো আমরা কুরআনে ও হাদিসে পাই। ভূমিকম্প, ঝড়-তুফান এবং অন্যান্য বিপদ আল্লাহর শক্তির ছোট নিদর্শন। রাসূল (সা.) তার উম্মতকে বিপদে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন।

রাসূল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি এই দোয়া তিনবার পড়বে, সে ভূমি ও আকাশের দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে।"

আরবি: بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল লাজি লা ইয়াদূর’রু মা’আস মিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামি’ই ওয়াহুয়া সামি’য়ুল আলিম।

ভূমিকম্পের সময়ে করণীয়

যখন মানুষের ওপর আল্লাহর শাস্তি আসে, তখন তার অসহায়ত্ব অনুভব করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। আল্লাহতায়ালা সূরা আনআমে বলেন, "আপনার আগেও বহু জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি; পরে তাদের দারিদ্র্য ও দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন করেছি, যেন তারা বিনম্র হয়।" (আয়াত: ৪২)

যখন তাদের ওপর আজাব পৌঁছেছিল, তখন তারা কেন বিনীত হয়নি? বরং তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তান তাদের কাছে তাদের অযথা কাজগুলো সুন্দর করে উপস্থাপন করেছিল। (আয়াত: ৪৩)

অতঃপর তারা উপদেশ ভুলে গিয়েছিল। তখন আল্লাহ তাদের জন্য সব কিছু খুলে দিয়েছিলেন, এবং তারা অহংকারে ভরপুর হয়ে গিয়েছিল। যখন তারা সে অহংকারে পৌঁছেছিল, তখন আল্লাহ তাদের পাকড়াও করেছিলেন। ফলে তারা গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছিল। (আয়াত: ৪৪)

ফুকাহায়ে কেরামের পরামর্শ

ফুকাহায়ে কেরাম ভূমিকম্পের সময়ে নফল সালাত বেশি বেশি পড়তে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় চাইতে পরামর্শ দিয়েছেন। অনেকে এই সময় দান-সদকার প্রতি উৎসাহিত করেছেন, কারণ হাদিসে এসেছে যে, "দান-সদকা বিপদ-আপদ দূর করে" (বুখারি)।

তাছাড়া, আল্লাহর প্রতি সদয় হলে আল্লাহও আপনির প্রতি সদয় হন। নবীজী (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি পৃথিবীজীবনের মানুষদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে, আসমানওয়ালা (আল্লাহ) তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন।" (তিরমিযি)

ভূমিকম্পের সময় বিশেষ দোয়া

ভূমিকম্পের সময়ে নির্দিষ্ট কোনো দোয়া বা জিকির সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়নি, তবে বান্দা নিজে যে কোনো দোয়া আল্লাহর কাছে করতে পারে, যাতে আল্লাহ তার সম্প্রদায় বা জাতিকে রক্ষা করেন।

ভূমিকম্পে দানের গুরুত্ব

ওমর বিন আব্দুল আযিজ (রা.) তার আমিরদের কাছে চিঠি পাঠাতেন, যাতে তারা ভূমিকম্পের সময়ে বেশি বেশি দান-সদকা করার জন্য উত্সাহিত হয়।

নেতৃত্বের ভূমিকা

ভূমিকম্পসহ যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা পেতে নেতাদের করণীয় হলো তাদের অধীনস্থদের সৎপথে পরিচালিত করা এবং তাদের মধ্যে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, "আর বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে।" (সূরা তাওবা: ৭১)

পাপাচার থেকে বিরত থাকা

কোরআনে বলা হয়েছে, "আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতি পথ খুলে দেবেন।" (সূরা তালাক: ২)।

ভূমিকম্প ও অন্যান্য বিপদগুলো মূলত আমাদের কর্মফল হিসেবে আসে, তাই দুর্যোগ চলাকালীন সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করার পাশাপাশি পাপাচার থেকে বিরত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বের বর্তমান অবস্থা ও হাদিসের বাস্তবতা

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যখন অবৈধভাবে সম্পদ অর্জিত হবে, জাকাত জরিমানা হিসেবে দেখা হবে, বিদ্যা ধর্মীয় শিক্ষাবিহীন হবে, এবং মদপান ও অন্য খারাপ কাজের প্রচলন হবে, তখন তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে এবং এমন একটি ভূমিকম্প হবে যা পৃথিবীকে তলিয়ে দিবে।" (তিরমিযি, হাদিস নং-১৪৪৭)

বর্তমান পৃথিবী এমনই একটি অবস্থায় রয়েছে, যেখানে এসব হাদিসের বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ভূমিকম্পের অপ্রতিরোধ্য প্রকৃতি

“আল্লাহ অধিকাংশ জাতিকে ভূমিকম্পের গজব দিয়ে ধ্বংস করেছেন। ভূমিকম্প এমন এক বিপদ, যা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

এ ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের একমাত্র পথ হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা করা।”

আপনারা যদি আরও জানতে চান যে, ইসলামে বিপদে পড়ার সময়ে কীভাবে দোয়া পড়া উচিত বা এমন বিপদের সময় আমাদের কী করণীয়, তাহলে আমার ওয়েবসাইট StudyTika.com এ আরো পোস্ট পড়তে পারেন। আমি আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে।

FAQ - ভূমিকম্পের সময় পড়ার দোয়া

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.