দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট) | দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার | পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার

ভূমিকা: বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই রচনায় আমরা এর কারণ, প্রভাব ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করেছি। সহজ ভাষায় লেখা এই রচনাটি তোমার জন্য খুব উপকারী হবে। পুরো রচনাটি পড়লে তোমার জ্ঞান বাড়বে এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারবে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা : প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় আমাদের অনেক কিছু প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে বাসস্থান, বস্তু সামগ্রী এবং খাদ্যদ্রব্য প্রধান। কিন্তু বাসস্থানের মত বর্তমানে মধ্যভিত্ত ও নিম্নবিত্তদের নিকট যে সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা হলে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। স্বধীনতার পর সিকি শতাব্দী পার হলেও এদেশের ৮০ শতাংশ মানুষের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য আসে নি। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দামের ঊধ্বগতিতে জনজীন পর্যুদস্ত হয়ে উঠছে। চাল, ডাল, তেলের মতো অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদির মূল্য নিত্যই বাড়ছে। গ্রামের দরিদ্র কৃষক ও ভূমিহীন শ্রমিক কোনোমতে দুমুঠো খেয়ে জীবনধারণ করে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে তাই এক বিরাট সমস্যা।

দ্রব্যমূল্য দৃদ্ধির স্বরূপ : আমাদের দেশের দুর্বল অর্থনীতি এবং দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি এখন আর একটি 'বিশেষ সংবাদ' নয়, বরং এটি এক ধরনের অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য দ্রব্যের দাম কতবার বেড়েছে, তার সঠিক হিসাব করা সম্ভব নয়। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে সমাজের শুধু মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী এবং বিত্তবান শ্রেণীই লাভবান হচ্ছে, বাকি সবাই নানা দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিপর্যস্ত। বিশেষ করে, সমাজের দারিদ্র্যপীড়িত অংশের ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে উঠছে।

দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির কারণ : দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অনেক কারণ রয়েছে। যেমন :

(১) চাহিদা ও যোগান : দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যহীনতা। চাহিদা তীব্র ও সরবরাহ সীমাবদ্ধ হলে পণ্যের জন্যে ক্রেতার ভীড় বেড়ে যায়। পণ্য সংগ্রহের জণ্যে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। ফলে অনিবার্যভাবে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।

(২) জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও উৎপাদন ঘাটতি : আমাদের দেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে হারে উৎপাদন বাড়ছে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বাড়ছে কিন্তু উৎপাদন ঘাটতির কারণে যোগান হচ্ছে অপ্রতুল। চাহিদা ও যোগানে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে দাম বেড়েই চলেছে ক্রমাগতভাবে।

(৩) অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি : আকস্মিক কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মজুতদার, মুনাফাখোর, ফটকাবাজ এবং চোরাচালানি ইত্যাদি অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থপর ভূমিকা থাকে। এই ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাজার থেকে উধাও করে গোপনে মজুত করে এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কালোবাজারির সূচনা হয়। যখন পণ্যের জন্য মানুষ হাহাকার শুরু করে, তখন তারা দাম বাড়িয়ে দেয় এবং ধীরে ধীরে গোপনে মজুত পণ্য বাজারে ছাড়ে। এর মাধ্যমে তারা চোরাপথে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।

(৪) চোরাচালানি : চোরাকারবারিরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় অনেক সময় দেশের পণ্য বিদেশে পাচার করে দিলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমে যায় ও পণ্য মূল্য বাড়ে।

(৬) কর বৃদ্ধি : অনেক সময় সরকারের মাথাভারি, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন চালাতে গিয়ে সরকারকে জনগণের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপাতে হয়। সে কর প্রত্যক্ষ হোক, কিংবা ভ্যাটের আকারে হোক তার ফলে পণ্যের দাম বাড়ে। এই জন্যে দেখা যায়, বাজেটে কোনো পন্যের কর বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকলে তার মূল্য রাতারাতি বেড়ে যায়।

(৭) কালো টাকার দৌরাত্ম্য : নানা অবৈধ পন্থায় সমাজে এক শ্রেণীর লোক বিস্তর কালো টাকার মালিক হয়েছে। কালো টাকার বদৌলতে তাদের ক্রয় ক্ষমতা সাধারণ লোকের তুলনায় অস্বাভাবিক বাড়ে। এই কালো টাকা পণ্যমূল্য রেখাকে সহজেই জনসাধারণের ক্রয়-ক্ষমতার নাগালের বাইরে নিয়ে যায়। জাতীয় অর্থনীতিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও নীতি শিথিল হলে এবং আমলাতন্ত্র দুর্নীতিতে লিপ্ত হলে কালো টাকা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। এর অবধারিত পরিণতি পণ্যমূল্য বৃদ্ধি।

(৮) চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি : আমাদের দেশে রজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও প্রশাসনিক দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর চাঁদাবাজ ঘাটে ঘাটে জবরদস্তিমূলকভাবে পরিবহন সেক্টর থেকে ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ চাঁদা তুলছে। স্বানীয় মাস্তান, প্রতিপত্তিশালী সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ পুলিশ- সাবাই চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হওয়ায় তার অশুভ প্রভাব পড়ছে পণ্যমূল্যের ওপর।

(৯) সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বণ্টনে অব্যবস্থা : আদেরদের দেশে রাজনৈতিক, সামাজিক অস্থিরতার কারণে পরিবহন ধর্মঘট, শ্রমিক ধর্মঘট, রাস্তাঘাট অবরোধ ইত্যাদি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, বণ্টন ব্যবস্থার ক্রুটির ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। উন্নত রাস্তাঘাট, নিশ্চিত যাতায়াত ও পরিবহনের মাধ্যমে প্রয়োজনানুসারে নির্দিষ্ট দ্রব্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিলে জনগণকে এ অনাকাঙ্ক্ষিত বর্ধিত দ্রব্যমূল্যের স্বীকার হতে হয় না।

(১০) বিশ্ব বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি : পণ্যমূল্য বৃদ্ধি কেবল বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। আশেপাশের দেশ এমন কি আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মান প্রভৃতি উন্নত দেশও এসমস্যা মোকাবেলা করছে। এক অর্থে এ এক আন্তর্জাতিক সমস্যা। এর ফলে আমাদের দেশেও আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়ছে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কিছুটা পার্থক্য আছে। এদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দারিদ্র্যপীড়িত। তাই পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে তাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।

পণ্যদ্রব্য বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া : পণ্যদ্রব্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। আমাদের দেশে অধিক দামে ক্রয় করার সামর্থ্য আছে মুষ্টিমেয় লোকের। তাই যেসব কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে তার প্রভাব সবটাই বৃহদাংশ জনগণের ওপর পড়ে। অধিক ব্যয় করার সামর্থ্য এদেশের অধিকাংশ জনগণেরই নেই। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যয় কমাতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, বেঁচে থাকার তাগিদে অপরিহার্য উপকরণ সংগ্রহ করতেই তারা হিমশিম খেয়ে যায়। সাধারণ মানুষের জীবনধারণে খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে নেমে যাচ্ছে জীবনধারণের মান, কমছে শিক্ষা ও সংস্কৃতির মান। এর প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। শিশুরা উপযুক্ত যত্নের অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভোগে। আর্থিক সংকটের ফলে ছাত্রছাত্রীদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাড়তি আয়ের জন্যে অনেকে অবৈধ উপার্জনের দিকে মনোযোগী হয়ে পড়ে। সমাজে সৃষ্টি হয় নানা অবক্ষয়।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিকার : দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই ঊধ্বগতি রোধ করার জন্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এর জন্যে প্রথমেই দরকার, সরকারের সদিচ্ছাপ্রসূত বাস্তব পরিকল্পনা। দ্বিতীয় ও অপরিহার্য করণীয় হচ্ছে পণ্যসামগ্রীর চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা করা। এ জন্যে দেশের কৃষি শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং আমদানি-রপ্তানি উন্নতি করতে হবে। দেশের উৎপাদন-ব্যবস্থার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পণ্যবাজারের ওপর সরকারের সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে খেয়াল-খুশিমত জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেদার মুনাফা লুটতে না পারে। কালো টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে যেন তা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ ইত্যাদি চলছে। ফলে উৎপাদনের হার অনেক কমে যাচ্ছে। সরবরাহ ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সমঝোতা সৃষ্টি করে এই সমস্যা লাঘব করা দরকার। এছাড়াও চোরাচালান ও চাঁদাবাজি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। বাজারের পরিস্থিতি যাতে সরকারের সদা নখদর্পণে থাকে সেজন্যে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দুর্নীতির লাগামহীন ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এই সব পদক্ষেপ নেওয়া হলে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।

উপসংহার : বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে যেভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে তার সঠিক প্রতিরোধ আজ আর বাংলাদেশের পক্ষে এককভাবে সম্ভব নয়। তারপরও যেটুকু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তা যেকোনো মূল্যেই করতে হবে। আর এই জন্যে প্রয়োজন উৎপাদন শিল্পের প্রসার এবং অকৃত্রিম দেশপ্রেম।

(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো)

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার রচনা ২

সূচনা: পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে আমরা পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, আজ পর্যন্ত আমরা স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করতে পারি নি। জনসংখ্যা সমস্যা, শিক্ষা সমস্যা, কর্মসংস্থানের সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য নানাবিধ সমস্যায় দেশ আজ জর্জরিত। বিগত কয়েক বছর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের যে লাগামহীন উর্ধ্বগতি চলছে তাতে জনজীবন আরো পর্যুদুস্ত হয়ে পড়েছে। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি আজ আর কোন বিশেষ সংবাদ নয় বরং এটা যেন স্বতঃসিদ্ধ একটি নিত্য সত্য। দেশে প্রতি ঘণ্টায়, এমনকি  প্রতি মুহূর্তে জিনিসপত্রের মূল্য বাড়ছে। গ্রামের এমন অনেক মানুষ আছে যারা আজ দু'বেলা দু’মুঠোভাতের জোগাড় করতে পারছে না। অনেকেরই আবার নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ

নিত্য প্রয়োজনীয় এই সমস্ত জিনিসপত্রের দাম এমনিতেই বাড়ে না এর পিছনে সক্রিয় থাকে অনিবার্য কিছু কারণ। এই সমস্ত কারণের কিছু আছে প্রাকৃতিক এবং কিছু মানুষের সৃষ্টি। আবার কিছু বিশ্ব অর্থনীতির অনিবার্য ফল। নিচে এই সমস্ত কারণের বিশদ বিবরণ দেয়া হলো :

১। ভারসাম্যহীন যোগান ও চাহিদা: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হল চাহিদার ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায়  যোগান কম। আমাদের দেশে বর্তমানে লোকসংখ্যা অত্যাধিক হওয়ায় পণ্যদ্রব্যের চাহিদা এতই বেশি যে তার তুলনায় যোগান বা সরবরাহ খুবই কম। ফলে সীমাবদ্ধ জিনিসের জন্যে অগণিত ক্রেতার ভিড় এবং পণ্য সংগ্রহের জন্যে তীব্র প্রতিযোগিতা- পরিণামে মূল্যবৃদ্ধি। স্বল্প আয়ের লোকেরা এ প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এখানে কেবল বিত্তবানদের আধিপত্য।

২। অসৎ ব্যবসায়ী : আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি বিশেষ কারণ মধ্যস্বত্বভোগীদের অতিরিক্ত মুনাফালোভী দৃষ্টিভঙ্গি। উৎপাদনের সঙ্গে এদের প্রত্যক্ষ কোন সম্পর্ক নেই। উৎপাদকদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে জিনিস কিনে সেটাই নানান হাত বদলের মাধ্যমে চড়া দামে বাজারে বিক্রি করে। আবার এক ধরনের অসৎ ব্যবসায়ী আছে যারা দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর জন্য মজুদের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করে এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে পণ্য নষ্ট করে দেয়- যাতে দ্রব্যমূল্য হ্রাস না পায়। এসব মুনাফাখোর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণেই মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম বাড়ে।

৩। কালো টাকা ও মুদ্রাস্ফীতি:  নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম মুদ্রাস্ফীতির কারণেও বাড়ে। দেশের ঘাটতি অর্থব্যবস্থায় ব্যয় সংকুলানের জন্য কিংবা রাজনৈতিক  দুরভিসন্ধি পূরণের জন্য সরকার অনেক সময় অতিরিক্ত নোট বাজারে ছাড়েন ফলে সম্পদের তুলনায় টাকার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং সেই টাকার বেশির ভাগই মুষ্টিমেয় কিছু ভাগ্যবানের হাতে থাকে। এসব ভাগ্যবানেরা সরকারের বিভিন্ন রাজস্ব, বিল ফাঁকি দিয়ে প্রভূত পরিমাণ কালো টাকার মালিক হন। এর ফলে যাদের ক্রয় ক্ষমতা বেশি তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোগ্যপণ্য ক্রয় করেন এবং জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে সহায়তা করেন।

৪। সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও ত্রুটিপূর্ণ বণ্টন ব্যবস্থা: পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং বণ্টন ব্যবস্থায় ত্রুটির জন্যেও অনেক সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বেড়ে যায়। কখন, কোথায়, কোন জিনিস কতটুকু প্রয়োজন তা পূর্ব থেকে হিসেবে করে যথাসময়ে ঐ জিনিস সেখানে পৌঁছে দিলে অনাকাক্সিক্ষত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে না। আমাদের দেশে পরিবহণ ধর্মঘট, শ্রমিক ধর্মঘট, রাস্তাঘাট বন্ধ ইত্যাদি প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসবের জন্য অনেক সময় ক্ষুদ্র সমস্যাও জটিল হয়ে পড়ে। উপযুক্ত রাস্তাঘাট ও পরিবহণের অভাবে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় ঠিক জিনিসটি পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে জনসাধারণকে অনাকাঙ্ক্ষিত বর্ধিত দ্রব্যমূল্যে জিনিসপত্র কিনতে হয়।

৫। প্রশাসনিক দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা: প্রশাসনিক দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেও দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশের প্রশাসন অনেকাংশেই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অদক্ষ। দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন অনেক সময় ব্যক্তিগত সুবিধা পেয়ে বিশেষ কোনো দ্রব্যের আমদানী সীমিত করে দেয়। ফলে এই বিশেষ দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যায়। আবার কোন দ্রব্য কখন কী পরিমাণে প্রয়োজন হবে তা প্রশাসনের অদক্ষতার কারণেই বোঝা যায় না। পরিণামে বাজারে বিশেষ বিশেষ দ্রব্যের যোগান সীমিত হয়ে যায়। আর তাতেই নির্দিষ্ট দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায়। আবার অনেক সময় আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বিশেষ কোনো দ্রব্যের আমদানী ও বাজারজাতকরণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় লেগে যায়। ফলে দ্রব্যের দাম বেড়ে যায়।

দ্রব্যমূল্য: বাংলাদেশ ও উন্নত বিশ্ব : পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। তবে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর সাথে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। সেখানে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে জনগণের আয়ও সে তুলনায় বাড়ে। যা আমাদের দেশে কখনও হয় না। আমাদের দেশে আয় যদি বাড়ে ১০০টাকা তো বাজারে দাম বাড়ে ৩০০ টাকা। ফলে বহু লোক অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিও কিনতে পারে না। বাধ্য হয়েই নির্দিষ্ট আয়ের লোকদেরকে তাদের জীবনযাত্রার মানকে নিম্নে নিয়ে আসতে হয়।

তাছাড়া উন্নত বিশ্বে মুক্ত বাজার অর্থনীতি চালু থাকলেও Market mechanism -এ সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে। ফলে দাম মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেতে পারে না।

জনজীবনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব : ক্রমাগত পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য জনজীবনে অসন্তোষ, ক্রোধ ও বিদ্বেষ পুঞ্জীভূত হতে থাকে। সমাজ জীবনে বিক্ষোভ ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ছড়িয়ে পড়ে। নিরুপায় মানুষ বেতন- ভাতা বৃদ্ধির দাবী ধর্মঘটে নামে। কল-কারখানা, যানবাহন, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবই বন্ধ হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে বেতন হয়তো কিছু বৃদ্ধি পায় কিন্তু প্রকৃত সমস্যার সমাধান কিছুই হয় না। কেননা বেতন বাড়তে না বাড়তেই দ্রব্যমূল্য বেড়ে আবার ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যায়।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিকার :

 পৃথিবীর কোনো সমস্যাই প্রতিকারহীন নয়। সমস্যা যতই কঠিন হউক তার প্রতিকার অবশ্যই থাকবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ একটি জটিল কাজ হলেও তার প্রতিকারের উপায় রয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির রোধকল্পে তাই নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।

১। উৎপাদন বৃদ্ধি: দেশের সর্বস্তরের জনগণ যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে এবং কল-কারখানায়, ক্ষেতে, খামারে সর্বত্র উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে তবে দেশের  মোট উৎপাদন (GNP) বাড়বে। ফলে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সাম্য ফিরে আসবে। এতে করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রকোপ হ্রাস পাবে।

২। আইন প্রণয়ন:  দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, মজুদদার ও ফটকা কারবারীদের প্রতি সরকার যদি সতর্ক দৃষ্টি রাখে এবং এদের বিরুদ্ধে কঠোর ও কঠিন আইনের ব্যবস্থা করে তবে এরা এদের কুটিল স্বার্থ হাসিল করতে পারবে না। ফলে দ্রব্যমূল্যও নিয়ন্ত্রণে থাকবে । তাছাড়া এদের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশবাসীকেও সোচ্চার থাকতে হবে।

৩। মুদ্রাস্ফীতি রোধ: দেশে মুদ্রাস্ফীতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যখন তখন কাগজী মুদ্রা ছাপানোও বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া কালো টাকা উদ্ধারের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

৪। বণ্টন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধের জন্য বণ্টন ব্যবস্থার ক্রটিসমূহ দূর করতে হবে। দেশের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত ও পর্যাপ্ত করতে হবে। পরিকল্পিত ভাবে দেশের নতুন রাস্তাঘাট পুল, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। জনসংখ্যা ও আঞ্চলিক চাহিদার অনুপাতে দ্রব্য বণ্টনের দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।

শেষত:  দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধের জন্য সবচেয়ে বড় ও বেশি যেটা দরকার তা হল-আমাদের সবাইকে আদর্শ দেশপ্রেমিক ও মানবতাবাদী হয়ে উঠা। দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল প্রকার অন্যায়-অপরাধ দুর্নীতি বর্জন করে অকৃত্রিমভাবে দেশকে ও দেশের জনগণকে ভালবাসতে হবে। তবেই আমরা একটি সুখী, সুন্দর, সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলার গড়ে তুলতে পারব।

আশা করি, এই রচনাটি তোমার উপকারে এসেছে। আরও সুন্দর ও দরকারি রচনা পড়তে ভিজিট করো StudyTika.com। এখানে তোমার জন্য আরও অনেক রচনা রয়েছে!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.