বাংলার মুক্তি আন্দোলনে ছাত্রসমাজ রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

ভূমিকা: বাংলার মুক্তি আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রচনায় আমরা তাদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারবো। বিস্তারিত জানতে রচনাটি পড়ে ফেলুন।

বাংলার মুক্তি আন্দোলনে ছাত্রসমাজ রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

 বাংলার মুক্তি আন্দোলনে ছাত্রসমাজ রচনা

বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন তথা স্বাধীনতার সংগ্রামে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এদেশের ছাত্রসমাজ বিভিন্ন সময়ে দেশ ও জাতির স্বার্থরক্ষার এবং বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনে অকুতোভয় সংগ্রামী ভূমিকা পালন করে এসেছে। অপরিসীম দেশাত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বুকের রক্ত দিয়ে তারা রচনা করেছে সাফল্য ও বিজয়ের এক অনন্য ইতিহাস। এদেশের ছাত্রসমাজের প্রত্যেকটি ছাত্র এক একজন সূর্য সন্তান। দেশমাতৃকার শক্তির প্রতীক। তাই শোষণ, বঞ্চনা এবং নৃশংস অত্যাচারের কবল থেকে দেশকে রক্ষার জন্য শুধুমাত্র অসীম আত্মবিশ্বাস আর দেশপ্রেমের দুরন্ত আবেগকে সম্বল করে নেমে এসেছে মুক্তি আন্দোলনে। সেনাবাহিনী ও জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে শত্রুর বিরুদ্ধে। দু’হাতে সব্যসাচীর মতো শত্রু নিধন করে গুলী খেয়ে লুটিয়ে পড়েছে অসংখ্য ছাত্র। ন’মাসের অমানুষিক পরিশ্রম আর অপরিসীম আত্মত্যাগের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছে চির আকাঙ্খিত স্বাধীনতার সূর্য। বাঙালি জাতি ছাত্রসমাজের এই অবদান চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। 

এদেশের ছাত্রসমাজ চিরকালই নব শক্তিতে উদ্বোধিত এক সংগঠিত শক্তির প্রতীক। তাদের চোখে জ্ঞানের আলো, বুকে সত্যের অগ্নিমন্ত্র আর হৃদয়ে শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধির এক বিশাল স্বপ্ন। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণই হচ্ছে তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাই শুধুমাত্র অধ্যয়ন, শুধুমাত্র জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষালয়ের চার দেয়াল তাদের সূর্যতেজে বলীয়ান, তরুণ, সৈনিক সত্তাকে আবদ্ধ করে রাখতে পারেনি। স্বাধীনতার পূর্বে বিগত চব্বিশ বছর ধরে তারা দেখে চারপাশে শোষণ আর বঞ্চনার চক্র দেশের মানুষদের সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্নকে নিস্পিষ্ট করছে। নিজ দেশে আমরা হয়েছি পরবাসী। তারা দেখেছে আমাদের উৎপাদিত ফসলে আমাদের অধিকার নেই, অধিকার নেই শিক্ষায়, জীবনের উন্নতির সকল ক্ষেত্র দ্বার আমাদের জন্য রুদ্ধ। এমন কি অধিকার নেই আমাদের মাতৃভাষার ওপরেও। জ্ঞানের আলোয় উদ্বোধিত ছাত্রসমাজ, অতীত ঐতিহ্য চেতনায়ও অনগ্রসর জাতির এই বঞ্চিত নিপীড়িত দৈন্যদশা দেশের সাধারণ মানুষের চেতনায় প্রথমে কোন বিপ্লব ঘটাতে পারেনি, কিন্তু ছাত্রসমাজের অন্তরে জ্বলে উঠেছিল আগুন। অসন্তোষ ও বিক্ষোভের পুঞ্জীভূত আগুন আন্দোলনের দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়লো। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর থেকে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত এই চব্বিশ বছরের ইতিহাস এদশের ছাত্রসমাজেরই স্তরে স্তরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস। 

ছাত্র সমাজ দেশের প্রতিটি ন্যায্য আন্দোলনে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছে। পাক-শাসকের শোষণ ও বঞ্চনার যাঁতাকল থেকে গণমানুষকে মুক্ত করার জন্য তারা স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেমেছে। ১৯৪৮ সালে উর্দুকে এদেশের রাষ্ট্রভাষারূপে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হবার কথা ঘোষণা করা হয়। নিজ দেশের ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য উত্তাল সমুদ্র তরঙ্গের মতো সর্বশক্তি নিয়ে সরকারি ঘোষণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো এদেশের ছাত্রসমাজ। ’৫২ সনে পুনরায় অনুরূপ ঘোষণার পর ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ বলে শতকণ্ঠে শ্লোগান দিয়ে ছাত্রদের মিছিল নামলো রাজপথে। তাদের আন্দোলনের ঢেউ স্পর্শ করলো দেশের সাধারণ মানুষকে। অত্যাচারিত, অবহেলিত সাধারণ মানুষের বন্দী অন্তরে সুপ্ত জাতীয়তাবোধ জেগে উঠলো। ছাত্র সমাজের এই বিশাল আন্দোলনের সামনে হতচকিত হয়ে পড়ল তৎকালীন সরকার। তাই ভাষা আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেবার লক্ষ্যে ১৯৫২ সনের ২১ তারিখে রাজপথে চলমান ছাত্রমিছিলের ওপর পাক-পুলিশ নির্বিচারে গুলী ছুঁড়ে হত্যা করে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক ও আরো অনেক ছাত্রকে। বুকের রক্ত দিয়ে ছাত্রসমাজ যে বাংলা ভাষার নাম লিখলো তা আজ স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। 

ভাষা আন্দোলনে ছাত্রসমাজের এই আত্মদান আমাদের জাতীয় চেতনা ও পরবর্তী সকল সংগ্রামের উৎস ও প্রেরণারূপে কাজ করেছে। ক্রমে ক্রমে জাতির স্বাধিকার আদায় ও প্রকৃত মুক্তির লক্ষ্যে ছাত্রসমাজ নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন রচনা করেছে। ১৯৬৬-র ছ’দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলনের পথ ধরে ছাত্রসমাজ এগিয়ে এসেছে একাত্তরের মুক্তি আন্দোলনের পথে। 

তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া ছাত্র ও জনগণের সংগ্রামের সামনে পর্যুদস্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ গভীর রাতে সেনাবাহিনীকে নির্বিচারে গণহত্যার আদেশ দেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এর ফলে সারাদেশে শুরু হয় এক ভয়াবহ তাণ্ডব, যেখানে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, ধ্বংস ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জনগণকে একত্রিত করেন এবং তাদের সাহসিকতার সাথে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথমেই যাঁরা সংগ্রামে অংশ নেন, তারা দেশের তরুণ, যুবক, কিশোর, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ। তারা কলম ফেলে বন্দুক, রাইফেল, মর্টার ও মেশিনগান হাতে তুলে নেন। মুক্তি বাহিনী গঠিত হয় দেশের সকল বাহিনী, সাহসী জনগণ এবং ছাত্রদের সম্মিলনে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী যুদ্ধে অংশ নেয়, আর ছাত্র মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের মেধা, বুদ্ধি এবং দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে-বন্দরে কঠিন পরিস্থিতিতে গেরিলা কৌশলে লড়াই করেন।

ছাত্ররা দিনের পর দিন অস্নাত, অভুক্ত, অনিদ্র থেকে গলা অবধি পুকুরে ডুবিয়ে অথবা গভীর জঙ্গলে সাপ খোপের ভয়কে উপেক্ষা করে সতর্ক দৃষ্টিতে শত্রুর অপেক্ষায় জয় করছে দুঃসহ প্রহর। ভয়ানক ঝুঁকি অতিক্রম করে কতো কিশোর ছাত্র শত্রুর আস্তানা আর অবস্থানের সংবাদ বহন করে এনেছে। এক হাতে গ্রেনেড আর এক হাতে রাইফেল নিয়ে বুকে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে শত্রুর অবস্থানের দিকে এগিয়ে গেছে তারা। অব্যর্থ লক্ষ্য ছুড়িয়ে দিয়েছে গ্রেনেড। নিধন করেছে শত্রু। প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে পুল, কালভার্ট উড়িয়ে দিয়ে পাক সেনাদের আগমন প্রতিহত করেছে। আবার সম্মুখ যুদ্ধে শত্রু সেনার ঝাঁক ঝাঁক গুলীতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে কত ছাত্রের বুক। কেউ একটি পা, একটি হাত ফেলে এসেছে যুদ্ধক্ষেত্রে। সারা জীবনের জন্য বরণ করে নিয়েছে পঙ্গুত্ব। তাদের প্রিয় অঙ্গের বিনিময়ে, জীবনের সুখের বিনিময়ে, অসংখ্য প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। বাংলার মানুষ আজ মুক্ত। 

বিশ্বের ইতিহাসে আজ আমরা একটি স্বাধীন জাতি। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে বিশ্ববাসীর মনে সৃষ্টি করেছে শ্রদ্ধা মিশ্রিত বিস্ময়। মুক্তি সংগ্রামের এই সফলতার মূলে ছাত্রসমাজের অবদান অসামান্য। বাংলাদেশের ইতিহসাসে ছাত্রসমাজের এই ভূমিকার কথা চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেকা থাকবে। তারা জাতির গৌরব। ভবিষ্যৎ স্বপ্নের রূপকাল।

উপসংহার: বাংলার মুক্তি আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অবদান অনস্বীকার্য। আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রচনা পড়তে এখনই ভিজিট করুন StudyTika.com!

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.